স.ম ওসমান গনী সোহাগ:
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে।পৃথিবীর সমগ্র দেশে এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যাধিটির প্রাদুর্ভাব প্রথমে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুপেই প্রদেশের উহান নগরীতে শনাক্ত করা হয়। রূপের লীলাভূমি এই ছোট্ট বাংলাদেশ মহামারি করোনার কাল থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। করোনার আঘাতে দেশটি আজ জনমানবহীন শূন্য হয়ে পড়ছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরীক্ষা, অফিস, আদালত, দোকান-পাট, গাড়ি, দেশের সকল কার্যক্রম সবকিছু বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। মানুষ এখন গৃহবন্দী হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
বাংলাদেশে নোভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিস্তার লাভ করেছে ২০২০ সালের মার্চ মাসের দিকে। যতই দিন যাচ্ছে ততই করোনা প্রভাব বাংলাদেশে যেন আছড়ে পড়ছে। সে কারণে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করছে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে কাজ করে যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিরাও। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা সদরে সরকারের পাশাপাশি ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড.জহুরুল হায়দার বাবু ও তার পরিষদ বর্গ। ২২ মার্চ থেকে শ্যামনগর সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে মানুষকে ঘরে রাখতে নিজেই মাঠে নেমে পড়েন এই তরুণ জননেতা। নিজেই মাইকিং করে মানুষকে আতংকিত না হয়ে সচেতনতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ করেন। একই সময় থেকে উপজেলা সদরের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে রান্না করা খাবার পাঠিয়ে দেন। বর্তমান সময়েও ইউপি সদস্যদের নিয়ে রৌদ্রে পুড়ে নিজেই মাঠে থেকে মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
বিদেশ এবং ভাটা থেকে আসা ব্যাক্তিদের হোম কোয়ারাইন্টাইন ও প্রাতিষ্টানিক কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করনে তিনি ছিলেন অতি সচ্চর। ভাটা শ্রমিকগন শ্যামনগর সদরে আসার সাথে সাথেই তিনি তাদের প্রাতিষ্টানিক কোয়ারাইন্টাইন নিশ্চিত করনে বিদ্যালয়ের কক্ষ প্রস্তুত করণ,খাবার সহ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসের ত্রæটি রাখেননি।প্রাতিষ্টানিক কোয়ারাইন্টাইন শেষে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার।
শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় মানুষের প্রয়োজনে মানুষের দোর গোড়ায় পৌছে যাচ্ছে একাধিক ভ্রাম্যমান বাজার, যা থেকে সুফল পাচ্ছে এলাকার হাজার হাজার মানুষ।এছাড়া শ্যামনগর সদরের অলিতে গলিতে কাভার্ড ভ্যান যোগে প্রতিনিয়ত ছিটানো হচ্ছে জীবানু নাশক স্প্রে।
শ্যামনগর সদর ইউপির চলমান কার্যক্রম ব্যাপক নজর কেড়েছে করোনা ভাইরাসের এ ক্রান্তিকালে। করোনা ক্রান্তিলগে দরিদ্রদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাসায় জরুরি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো পরিবারের কাছে শিশুখাদ্যও পৌঁছে দিয়েছে সদর ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, অদ্যবধি ৩৩০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্য পৌছে দিয়েছেন সদর ইউনিয়ন পরিষদ। মানুষকে ঘরে রাখতে প্রতিনিয়ত সরকারি এবং চেয়ারম্যান এর নিজস্ব তহবিল থেকে ৯ টি ওয়ার্ডের খেটে খাওয়া এবং মধ্যবিত্ত মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ভ্যান যোগে খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
চলমান করোনা ভাইরাস সংকটে কাজ হারিয়ে বা বেকার হয়ে যারা সাময়িক সমস্যায় পড়েছেন কিন্তু কারো কাছে সরাসরি সাহায্য চাইতে পারছেন না তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এ্যাড.জহুরুল হায়দার। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্যামনগর সদরে বসবাসরত ভাসমান ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, রান্না করা খাবার, ইফতার বিতরণের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত এসব পরিবারের খোজ রেখেছেন পরিষদের পক্ষ থেকে। প্রতিনিয়ত শ্যামনগর সদর এলাকার চারশত পরিবারের মধ্যে ইফতার পাঠানো হচ্ছে বলে জানান শ্যামনগর সদর ইউপি সচিব আমিনুর রহমান।
প্রবীণ শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, ইমাম পুরোহিত সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে আলাদাভাবে খাবার সামগ্রী পৌছে দিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়েছেন শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ এমনটি বলেছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা ভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে সচেতনতা বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। প্রতিনিয়ত তথ্যবহুল ফেসবুক পোস্ট, বিভিন্ন মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমেও মানুষকে সচেতন করতে এই ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং করোনা সংক্রমন কমাতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে, দোকানের সামনে ৩ ফুট দূরে দূরে বৃত্ত তৈরি, দোকোনের সামনে দিয়ে রশি টানিয়ে দিয়ে দূর থেকে ক্রয় করার অভ্যাস গড়ে তোলা, দোকানের সামনে এবং বাজারের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত টিউবওয়েলে সাধারণ মানুষকে হাত ধুতে ক্ষারযুক্ত সাবান টানিয়ে দেওয়া সহ নানাবিধ জনকল্যাণ মূখী উদ্যোগ। যা থেকে কিছুটা হলেও মানুষের মধ্যে অভ্যাস গড়ে উঠেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার নজরুল ইসলাম জানান, করোনা ক্রান্তিকালের শুরু থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চোখে পড়েছে ,তবে ব্যাতিক্রমী মনে হয়েছে এ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবুর কার্যক্রম।তিনি বলেন,শুরু থেকেই মাঠে থেকে কাজ করতে দেখেছি তাকে এবং সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থান করে প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের খোজ রেখেছেন তিনি।
এ্যাড. জহুরুল হায়দার বলেন, বভিন্নভাবে এলাকার নেতাকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রান্তিক পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে থাকি। তিনি জানান, নিয়মিত খাদ্যের বাইরে পরিবারগুলো থেকে শিশুখাদ্যও দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার পরিষদে এসে কষ্ট করে খাবার নিয়ে যেতে হয়না বরং আমি নিজের পয়সা দিয়ে পরিবহন যোগে সকলের বাড়িতে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি নিয়মিত। এসময় তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি বলেন, দরিদ্র, স্বজন ও প্রতিবেশীর খোঁজ নেন এবং অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান।
Leave a Reply